প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুপ্রেরণা ও দক্ষ নেতৃত্বে আগামীদিনে ত্রিপুরা বিকাশের পথে আরও এগিয়ে যাবে
ত্রিপুরা সরকার ২০৪৭ পর্যন্ত রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের রূপরেখা নিদিষ্ট করে ২০২২ সালে ২১ জানুয়ারী পূর্ণরাজ্য দিবস উপলক্ষে ‘লক্ষ্য-২০৪৭’ শীর্ষক ভিশন ডকুমেন্ট প্রকাশ করেছে। রাজ্যে শিল্পের বিকাশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, রাবার, চা, বাঁশ ভিত্তিক শিল্প, হস্তশিল্প, কৃষি ও উদ্যান ফসল ভিত্তিক অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজেসের (এমএসএমই) ইউনিট গুলিকে রাজ্য সরকার সহায়তা দিচ্ছে। কেননা এমএসএমই ক্ষেত্রের উন্নয়ন বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্যের সম্প্রসারণে সহায়তা করছে। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুপ্রেরণা ও দক্ষ নেতৃত্বে আগামীদিনে ত্রিপুরা বিকাশের পথে আরও এগিয়ে যাবে। আজ নয়াদিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিবগণ ও নীতি আয়োগের পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
নীতি আয়োগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, উল্লিখিত এমএসএমইগুলির জন্য মূলধনী ভর্তুকী, কমখরচে বিদ্যুৎ ইত্যাদি সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে ‘ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন ইনসেনটিভ স্কিম (টিআইআইপিআইএস) ২০২২’- এর অধীনে। ত্রিপুরাকে দেশের মধ্যে আগর বাণিজ্যের হার হিসেবে গড়ে তুলতে এবং ২০২৫-র মধ্যে ২০০০ কোটি টাকা মূল্যের আগর অর্থনীতির সুযোগ নিতে রাজ্য সরকার ‘ত্রিপুরা আগরউড পলিসি-২০২১’ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার বিনিযোগ বাড়াতে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে উন্নয়নমুখী প্রশাসন চালাতে অঙ্গিকারবদ্ধ। সরকার ইতিমধ্যে উৎপাদন নির্ভর শিল্পে বেসরকারি বিনিযোগ টানতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সেই উদ্দেশ্যেই ‘স্বাগত’ পোর্টালের মাধ্যমে প্রাপ্ত বিনিয়োগের প্রস্তাবগুলিকে ‘সিঙ্গল উইন্ডো সিস্টেমে’ অনুমোদন দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই পোর্টলে ১৭টি দপ্তরের ৬০টি পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে যাতে ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুমোদন তাড়াতাড়ি দেওয়া যায়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার তার মূলধনী ব্যয় ২০২০-২১-এর ৮৩৫.০০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ২০২২-২৩ বছরে ২২০০ কোটি করেছে অর্থাৎ বার্ষিক বৃদ্ধি হয়েছে ৬২ শতাংশ। নর্থ-ইস্ট গেøাব্যাল ইনভেস্টস সামিট -২০২৩-এর প্রাক্কালে রাজ্য সরকার ডোনার মন্ত্রকের সাথে মিলে রাজ্যে বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে খতিয়ে দেখতে একটি গোল টেবিল সম্মেলন করেছে। এই সম্মেলনের ফলে দেশী ও শিল্পোন্নয়নের জন্য ২ হাজার একর জমি চিহ্নিতকরণ, পিপিপি প্রকল্প, বিশেষ আর্থিক জোন স্থাপন ইত্যাদি উদ্যোগ ও রাজ্য সরকার নিয়েছে এবং রাজ্যের ১৫টি শিল্প নগরীয় উন্নয়নের জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকও ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। বিমান যাত্রীদের সুবিধার্থে রাজ্য সরকার এভিয়েশন টার্বাইন ফিউল-এ ১ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে দিয়েছে। নীতি আয়োগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগরতলা-চট্টগ্রামের মধ্যে বিমান পরিষেবাকে উৎসাহ দিতে রাজ্য সরকার বার্ষিক ১৪ কোটি টাকা ভর্তুকী দিয়েছে।
বিজনেস রিফর্মস অ্যকশন প্ল্যান (বিআরএপি) ২০২০-র রিপোটে ত্রিপুরাকে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রগতিশীল শ্রেণীতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে এবং বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চপর্যায়ে রাখা হয়েছে। সরকারের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস নীতিকে আইনী সমর্থন দেওয়ার লক্ষ্যে ‘ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রীজ (ফ্যাসিলিটেশন) অ্যাক্ট ২০১৮’ প্রনীত হয়েছে। তেমনি ‘দ্য ত্রিপুরা গ্যারান্টিড সার্ভিসেস টু সিটিজেনস অ্যাক্ট ২০২০’-এর মাধ্যমে সময়মত পরিষেবা প্রদানের প্রচেষ্টা করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য ত্রিপুরা রাজ্য পলিসি ২০২২’ রাজ্য প্রণয়ন করেছে। রাজ্যে মহিলাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এতে বিভিন্ন পদক্ষপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি চাকুরিতে রাজ্যে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ পদ সংরক্ষণ রাখা হয়েছে। ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসে শুধুমাত্র মহিলাদের নিয়ে একটি ব্যাটেলিয়ান গঠন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মহিলাদের আর্থিক দিক দিয়ে স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে এবং তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার মহিলাদের নিয়ে স্বসহায়ক দল গঠনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেন, গ্রামীণ গরিব অংশের ৪,১৬,২৯২ জন মহিলা ৪৬,৪৭৫টি মহিলা স্বসহায়ক দল, ১,৯৫০টি ভিলেজ অর্গানাইজেশন ও ৮৮টি ক্লাস্টার লেভেল ফেডারেশনের (সিএলএফ) সাথে যুক্ত রয়েছেন।
এই প্রতিষ্ঠানগুলি মহিলা স্বসহায়ক দলগুলির প্রয়োজনীয়তাকে মেটানোর জন্য ৪০১.৯০ কোটি টাকা রিভলভিং ফাÐ (আরএফ) হিসেবে এবং কমিউনিটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (সিআইএফ) হিসেবে মঞ্জুর করেছে। এছাড়া মহিলা স্বসহায়ক দলগুলি যাতে বিভিন্ন বৃত্তিমূলক কাজে অংশ নিতে পারে সেজন্য এই দলগুলিকে ৭২৪.৯২ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে।